আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ আজও বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত। শিক্ষার শেষ সীমানায় পৌঁছানোর পরও তারা আজ বেকারত্বের বন্ধন থেকে বের হতে পারেনি। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ছোট এ দেশটির পক্ষে সম্ভব কিনা সেটাও ভাবার বিষয়। সরকারি চাকরিতে পদ সংখ্যা সীমিত হওয়ার দরুন হাতেগোনা কিছু শিক্ষিত যুবদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। বেসরকারি খাতে নানাবিধ সমস্যা ও শর্ত থাকার কারণে অনেকেই তাতে আগ্রহী নয়। তারপরেও বলা যায় দেশের ধনিক শ্রেণীর একটা বিরাট অংশ দেশে বেকার সমস্যা সমাধানে তাদের কোনো কর্তব্য ও করণীয় আছে বলে একদমই মনে করেন না। আবার দেখা যায় তারাই দেশে নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের পরিবর্তে বিদেশি বিনিয়োগে বেশ আগ্রহী। কোভিড-১৯ আসার পর দেশ-বিদেশের বহু নামিদামি, খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে জানান দিয়েছে অর্থনীতি অঙ্গনে করোনার প্রভাব। বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীর এ তালিকায় আবারও নাম লিখেছে অনেক মানুষ। যার ফলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা পূর্বের তুলনায় বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এহেন সমস্যা সমাধানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সৃষ্ট কর্মসংস্থানের চেয়ে বেশি সম্ভাবনা দেখাতে পারে অনলাইনে উপার্জনের বিভিন্ন খাত।বক্ষমান প্রবন্ধের আমরা এসব নিয়ে কিছু লেখব।
১। ইউটিউবঃ আমরা সবাই জানি বিশ্বের অন্যতম ও বহুল ব্যবহৃত ভিডিও শেয়ারিং সাইট হল ইউটিউব। এখানে আপনি আপনার দক্ষতা প্রদর্শন করে বা বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিও তৈরি করে বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন। আমার মতে এটা সবচেয়ে সহজ মাধ্যম যেখান থেকে এত বেশি পরিমাণ উপার্জন সম্ভব যা ভাবতেও আপনাকে অবাক করে দেবে।
২। ব্লগিংঃ ব্লগিং হল এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে আপনি আপনার যে কোন আইডিয়া শেয়ার করতে পারেন লেখনীর মাধ্যমে তা হতে পারে তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত, ধর্মীয়, শিক্ষা মূলক কোনো তথ্য, চিকিৎসা বা অন্যকিছু। আপনার লেখনি হতে হবে সম্পূর্ণ ইউনিক তথা কারো থেকে কপি নয় সম্পূর্ণ নিজের ধারণা থেকে তৈরী।তবে আপনি অন্য যেকোন মাধ্যম থেকে সে সম্পর্কে আইডিয়া বা জ্ঞান অর্জন করে আপনি আপনার তথ্যের ভান্ডারকে সম্প্রসারিত করতে পারেন, কিন্তু আপনাকে লিখতে হবে নিজের মত করে নিজের ভাষায় ও তথ্যবহুল। আপনি চাইলে ব্লগিং ফ্রিতেও শুরু করতে পারেন আবার চাইলে সামান্য অর্থ ব্যয় করে শুরু করতে পারেন। তবে ফ্রির তুলনায় ব্যয়কৃত ব্লগ থেকে তুলনামূলক বেশি আয় সম্ভব। গুগল এডসেন্স বা অন্যান্য এ্যাড প্রোভাইডারদের এ্যাড বসিয়ে ব্লগ থেকে একটি স্মার্ট ইনকাম করা সম্ভব।
৩।ওয়েবসাইট তৈরিঃ আপনি চাইলে নির্দিষ্ট ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করেও বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন যেমন ক্লাসিফাইড এ্যাড লিস্টিং সাইট,ফোরাম, রিভিউ সাইট, নিউজ পোর্টাল ইত্যাদি। এসব সাইটে গুগোল অ্যাডসেন্স বা অন্যন্য এ্যাড প্রোভাইডারদের এ্যাড বসিয়ে বেশ ভাল পরিমান উপার্জন করতে পারবেন।
৪।ফেসবুকঃ ফেসবুক থেকেও ভাল পরিমান আয় করা সম্ভব যদি আপনার কোন ব্লগ বা নিউজ শেয়ারিং সাইট থাকে তাহলে ফেসবুকের নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে ফেসবুক ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল এর মাধ্যমেও প্রচুর পরিমাণ আয় করা সম্ভব।
৫। ই-কমার্সঃ একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরী করে আপনি নিজের সংগৃহীত পণ্য বা অন্যের অধীনে থাকা পণ্য বিক্রি বা সেবা বিক্রি করে উপার্জন করতে পারেন। অল্প পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করতে পারেন এমন কিছু যা আপনার ভাগ্য বদলে দিতে পারে আ্যমাজান বা ই-বে'র মতো। কিভাবে করবেন ই-কমার্স সাইট?জানতে প্রশ্ন করুন গুগল বা ইউটিউবে পেয়ে যাবেন বিশদ তথ্য।
৬।এফ-কমার্সঃ ফেসবুকের মাধ্যমে যে ই-কমার্স করা হয় এক কথায় তা হল এফ-কমার্স।ফেসবুক পেজ ও বিজনেস এ্যাকাউন্ট তৈরি করে কোন প্রকার খরচ ছাড়াই শুরু করতে পারেন এফ কমার্স বিজনেস। তাহলে আর দেরি কেন তৈরি করুন ফেসবুক পেজ এড করুন আপনার পণ্য, পৌঁছে দিন আপনার কাঙ্খিত ক্রেতার কাছে আর হয়ে উঠুন উদ্যোক্তা ফেসবুকের সাথে সম্পূর্ণ বিনা খরচে।
৭। আ্যফিলিয়েট মার্কেটিংঃ অন্যের পন্য নিজের আয়ত্তে না রেখে শুধু পণ্য বিক্রির লিংক শেয়ার করে পণ্য বিক্রি করার কৌশল কে বলা হয় এফিলিয়েট মার্কেটিং। এটা একটা বহুল জনপ্রিয় ও ব্যাপক অর্থ উপার্জনের সম্ভাবনাময় একটি খাত। অ্যামাজনের, ই,-বের মতো বিশ্বসেরা ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে অ্যাফিলিয়েএ লিংক নিয়ে তা মার্কেটিং করে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে খুলে যেতে পারে আপনার ভাগ্যের দোয়ারে, ঘুচতে পারে বেকারত্বের অভিশাপ।
৮। ডোমেইন পার্কিংঃ স্বল্প মূল্যে ভালো মানের ডোমেইন কিনে বিভিন্ন ডোমেইন পার্কিং কোম্পানি Sedo, Afternic, Bodis ইত্যাদিতে ডোমেইন পার্ক করে অনেক ভালো মূল্যে তা বিক্রি করতে পারেন সাথে ভালো মানের ট্রাফিক বা ভিজিটর থাকলে পেতে পারেন চোখধাঁধানো পার্কিং রেভিনিউ বিনাশ্রমে।
৯। ফ্রিল্যান্সিংঃ নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে যেমনঃ ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভলপমেন্ট, অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট, কনটেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ভিডিও এডিটিং, এনিমেশন মেকিং, ডাটা এন্ট্রি, ডাটা এ্যানালাইসিস, মার্কেট রিসার্চ,ই-কমার্স মেনেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে upwork, freelancer,fiver ইত্যাদির এর মতো বিশ্বসেরা সাইট থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
১০। ড্রপ শিপিংঃ এককথা যদি বলতে হয় ড্রপশিপিং হলো অন্য কোন ই-কমার্স সাইট যেমন Ali express, eBay, amazon ইত্যাদি থেকে পণ্যের বিস্তারিত সংগ্রহ করে নিজের ই-কমার্স সাইটে আপলোড করে সাপ্লাই এর মাধ্যমে নিজের নির্ধারিত মূল্যে সরাসরি ক্রেতার নিকট পন্য পৌছিয়ে দেয়াকে বোঝায়। যেখানে ক্রেতা আপনাকেই ব্র্যান্ড হিসেবে জানবে এবং সাপ্লায়ার ই কমার্সের পরিচয় গোপন থাকবে। ওয়ার্ডপ্রেসের বিভিন্ন প্লাগইনস যেমনঃ alidropship, woo-droopship ইত্যাদির মাধ্যমে স্বল্প বিনিয়োগ করে কম মূল্যে পণ্য কিনে ভালো মূল্যে পণ্য বিক্রি করে আপনি হতে পারেন একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তা।
১১। ডিজিটাল প্রোডাক্টস্ এফিলিয়েট মার্কেটিংঃ এটি অন্য এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মতই কিন্তু পার্থক্য হলো এখানে ফিজিক্যাল প্রোডাক্টস এর পরিবর্তে ডিজিটাল প্রোডাক্টস এর এ্যাফিলিয়েট করতে হয়। অ্যামাজন, ই-বে, আলিএক্সপ্রেস যেখানে ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ টেন ৫-১০% কমিশন দিয়ে থাকে সেখানে এসব সাইট থেকে আপনি এর সর্বনিম্ন 30% থেকে 50% বা 70% পর্যন্ত কমিশন আয় করতে পারেন।Zvizoo, Worior Plus, envato, বিভিন্ন হোস্টিং সাইট যেমন blue host, namecheap, a2hosting ইত্যাদি।
১২। সিপিএ(CPA) মার্কেটিংঃ সি পি এ'র পূর্ণরূপ হল cost per action। এটি এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মতো হলেও মূল ধারার এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে ভিন্ন, কারণ সাধারণত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে পণ্য বা সেবা বিক্রি করে কমিশন অর্জিত হয় কিন্তু সিপিএ তে পণ্য বা সেবা বিক্রি না করে শুধু কিছু ধরে দেওয়া কাজ (auction) করেও কমিশন অর্জিত হয়ে থাকে যেমনঃ software download, from fill up, from registration, email submission, pin submission, survey ইত্যাদি। আপনার যদি কোন ওয়েবসাইট বা ব্লগ থাকে তবে perform, CPF full, Adwork media, CPA grip,maxbounty। ইত্যাদির মাধ্যমে কাজ সংগ্রহ করে আপনার ভিজিটর কে লিডে রূপান্তরিত করে বেশ ভালো পরিমাণ আয় করতে পারেন।
১৩। ডোমেইন ও হোস্টিং রিসেলারঃ ডোমেইন ও হোস্টিং রিসেলার করেও বেশ ভালো পরিমাণ উপার্জন করা সম্ভব। বিশ্বের বিখ্যাত ডোমেইন রিসেলার কোম্পানি যেমন Uk2 Group, Resell biz ইত্যাদি থেকে ডোমেইন রিসেলার প্রাইসে নিয়ে আপনার কাঙ্খিত মূল্যে বিক্রি করতে পারেন। এছাড়া ফ্রীতে ডোমেইন রিসেলার একাউন্ট করেও ডোমেইন বিক্রি করা সম্ভব। এবার আসুন হোস্টিং রিসেলার বিষয়ে। ডোমেইনের মত হোস্টিং ও পাইকারি মূল্যে কিনে আপনার কাঙ্খিত মূল্যে বিক্রি করতে পারেন। Namecheap, Siteground,Godaddy,Hostgator,Bluehost ইত্যাদি বিশ্ব বিখ্যাত হোস্টিং প্রোভাইডারদের কাছ থেকে হোস্টিং কিনে তা বিক্রি করতে পারেন। তবে হোস্টিং ব্যবসা সফলতা অর্জন করতে হলে অবশ্যই আপনাকে 24/7 সাপোর্ট দেওয়ার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে এবং কাস্টমারদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য হোস্টিং রিলেটেড পর্যাপ্ত জ্ঞান আপনাকে অর্জন করেই ব্যবসা শুরু করতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন উপার্জনের পন্থা।এছাড়া আরো অনেক উপায় আছে যেগুলোর মাধ্যমে ঘরে বসে উপার্জন করা সম্ভব। এর যেকোনো একটি বা একাধিক বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে আপনি একটি স্মার্ট ইনকাম করতে পারবেন অনায়াসে।যার মাধ্যমে দূর হবে বেকারত্ব,কেটে উঠতে পারবেন অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা। সবার জন্য শুভকামনা।
0 মন্তব্যসমূহ