ডায়াবেটিসে করণীয় ও বর্জনীয়।
মরণব্যাধি গুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম।ডায়াবেটিস কি বলা হয় সকল রোগের মা। কারণ এমন কোন অঙ্গ নেই যেখানে ডায়াবেটিস তার ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার না করে। আমেরিকাতে মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হিসেবে ডায়াবেটিসকেই বিবেচনা করা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। IDA Diabetes Atlas 10th edition -2021এর তথ্য মতে বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৩৭ মিলিয়ন বা ৫৩ কোটি ৭০ লক্ষ।যাদের বয়স ২০ থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, খাদ্যাভ্যাসে বিচ্যুতি, শারীরিক পরিশ্রমের অনীহা সহ বিভিন্ন কারণে এর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান(নিপোর্ট) এর তথ্যমতে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ১০ লক্ষ।যাদের মধ্যে ১৮-৩৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২৬ লক্ষ এবং ৩৫ এরঊর্ধ্বে বয়সে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮৪ লক্ষ।পরিসংখ্যান বলছে ডায়াবেটিসের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। এহেন পরিস্থিতিতে এর কারণ চিহ্নিতকরণ এবং প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এর ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে কী করনীয় ও বর্জনীয় তা নিয়েই আজকের এই নিবন্ধ।
ডায়াবেটিস কি ও কেনঃ
সংক্ষেপে বললে মানবদেহের রক্তে বেশি পরিমাণ গ্লুকোজ বা সুগারের উপস্থিতিকে ডায়াবেটিস মেলাইটিস বা মধুমেহ বা বহুমূত্র বলা হয়।সংক্ষেপে আমরা যেটাকে ডায়বেটিস বলে থাকি।আমরা যখন কোন খাবার খাই তখন আমাদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে বা কার্বোহাইড্রেটকে চিনিতে বা গ্লুকোজে রূপান্তরিত করে থাকে। আর অগ্নাশয় বা প্যানক্রিয়াস থেকে আমাদের শরীরে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিন নামক যে হরমোন নিঃসৃত হয় সেটা আমাদের শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয় গ্লুকোজ বা চিনি কে গ্রহণ করার(যা মানব দেহে জ্বালানি বা শক্তি হিসেবে কাজ করে থাকে) ও আমাদের গ্রহণকৃত খাদ্যের অতিরিক্ত গ্লুকোজকে কমিয়ে দেওয়ার। যখন মানব দেহে ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন তৈরি হতে না পারে অথবা ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার পরেও যখন ঠিক মত কাজ করতে পারে না তখন শরীরের রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ বা চিনি জমা হতে শুরু করে যা ডায়াবেটিস সৃষ্টির কারণ। অর্থাৎ আমাদের দেহে ইনসুলিন নামক হরমোন এর সম্পূর্ণ বা আপেক্ষিক ঘাটতির কারণে যে বিপাকজনিত গোলযোগ তৈরি হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং একপর্যায়ে তা প্রসাব বা ইউরিনের সাথে বেরিয়ে আসে এই সামগ্রিক অবস্থাকেই বলা হয় ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণঃ
বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশের ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের পঞ্চাশ শতাংশের বেশি মানুষ জানে না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে। এ কারণে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সবার সচেতনতা তৈরি খুবই জরুরী। কিছু সাধারন লক্ষণ থেকে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনি এ রোগে আক্রান্ত কিনা। নিম্মে কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলঃ
১। ঘন ঘন পিপাসা লাগা ও প্রসব হওয়া।
২। শরীর অত্যাধিক দুর্বল লাগা এবং ঘোর ঘোর ভাব আসা।
৩। ক্ষুধা পূর্বের তুলনায় বেড়ে যাওয়া।
৪। সময় মত খাবার না খেলে রক্তে শর্করা বেড়ে হাইপো হওয়া।
৫।মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি পূর্বের তুলনায় আকর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়া।
৫।কোন কারন ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া।৬। ক্ষত দ্রুত না শুকানো।
৭।চামড়া শুষ্ক ভাব অনুভূত হওয়া ও খসখসে ও চুলকানি হওয়া।
৮। বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হওয়া।
৯।চোখে কম দেখা ইত্যাদি।
0 মন্তব্যসমূহ